রূপালি আলোয় বদলে যাওয়া রাত

927
ঝর্ণা মনি

নাম?আমাদের আবার নাম হয় নাকি গো?হাসালে
বাবু!রোজ রাতে বদল হই আমরা,বদল হয় নামও।
একেকদিন একেক নামেই ডাকে একেক বাবু।হয়তো
কখনো আমারও নামছিল।মুখে মধুরফোঁটা দিতে না
পারলেও মা নিশ্চয়ই আহ্লাদ করে রেখেছিল একটা
নাম।ফুলের নামে কিংবা রঙের নামে-জানি না,হবে
হয়তো একটা।সেই নামটাও হারিয়ে গেছে তোমাদের
বিজলি বাতির আলোয়।সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মায়ের দেয়া
নামটুকুও যে কেড়ে নিয়েছে গো বাবু!

বাবা?শুনেছি মস্তবড় সওদাগর ছিল সে।ধন দৌলত,
টাকা পয়সা কিছুরই অভাব ছিল না তার।ফিটফাট
পোশাকে বাবুসেজেই চলত।পাঞ্জাবিতে নাকি সোনার
বোতাম লাগানো ছিল তিনটে করে।আকিক, নীলা,
কত কি পাথরের আংটি ছিল তার।পাথরের রঙে
চকচক করতো অনামিকাটি।দুধে আলতা গায়ের রঙ
ছিল তার। অনেকটাই নাকি আমি পেয়েছি।বলতো
পাড়ার লোকেরা।

সবই ছিল তার।শুধু ছিল না চরিত্রের ঠিক।নাহলে
বাণিজ্য করতে এসে অচেনা অজানা গ্রামের এক
হতদরিদ্র কৃষকের অশিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করে
কেউ? বিয়ের একমাসেই আমাকে পেটে দিয়ে মাকে
ফেলে সটকে পড়েছিল অন্য কোথাও,অন্য কোনো
খানে।নৌকো বেঁধেছিল বিদেশবিভুঁইয়ের কোনোঘাটে।
 
মায়ের কোনো দোষ ছিল না-এটাও শোনেছিলাম
পাড়ার লোকের কাছেই।কতইবা বয়স ছিল তার!
বিয়ের একমাসেই উধাও হয়ে গেল স্বামী নামক
কুলাঙ্গার ব্যক্তিটি।শরীরে তখন আমার অস্তিত্ব।বুড়ো
দরিদ্র কৃষকটিও ধুম করে মরে গেল ওলাউঠায়। 
একমাসের আনন্দের বোঝা সঙ্গী করে ক্ষুধার 
জ্বালায় ছোটাঝিটি ছুটে বেড়াত এ-বাড়ি,ও-বাড়ি।

কোনো এক ঝড়ের রাতে আমি এলাম
অনাকাঙ্খিতভাবেই।ছোটা বুয়াটির দৌড়ানো আরো
বেড়ে গেল।আমাকে পিঠে বেঁধেই সকালসন্ধ্যা ছুটত
মাইলের পর মাইল।কিন্তু আমিযে বড় অপয়াগো বাবু।
রক্তবীজ দিয়েই পালিয়েছিল বাপ আর তিন বছরের
মাথায় হারালাম একমাত্র সম্পদ মাকেও।ক্যান্সার কেড়ে
নিল জন্মের সব দায়।এরপর রাজধানীর অলিগলির
রাস্তাই যে ঠিকানা আমার। বসন্ত আসার আগেই
কুকুর-শেয়ালের উৎসবের বস্তু আমি! পিশাচের
অট্টহাসিতে বদল হওয়া রাতই আমার নিয়তি!

বাবা পালিয়ে ছিল মায়ের কাছ থেকে,মা পালালো
পৃথিবী থেকে, আমিও পালাতে চাই জীবন থেকে।
বিজলি বাতি, বদল হওয়া রাত্রি, কুকুরের জীবন
সবকিছু আমাকে গিলে খায়। তবুও পালাতে পারি
না।কি যাবেআসবে এমন মেয়ের নাম দিয়ে?এমন
নামহীন মেয়েকে ‘অনামিকা’ নামেই ডেকো,বাবু!

রূপশ্রী/এসআর