মুসলিম নারীদের অনুপ্রেরণার নয়া বাতিঘর ‘জামিলেহ’

244

সামিয়া আফরিন

জামিলেহ আলামুল হুদা। ইরানের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেয়ে। শিক্ষাজীবনে দর্শন বিভাগে সর্বোচ্চ ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। নিজের প্রতিভা ও কর্মগুণে ইরানী নারীদের অগ্রযাত্রায় এক অনন্য পৃথিকৃৎ হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার অবদান ও প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ যাকে ইরানের বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয় ‘লিডারশীপ এন্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট’ ডিপার্টমেন্টের সদস্য নির্বাচিত করেছে।
মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর মূল ফোকাস হলো, মুসলিম মেয়েরা যাতে শিক্ষা-দীক্ষা এবং কর্মজীবনে নিজেদের শালীনতা বজায় রেখে এগিয়ে যেতে পারে। সেজন্য জামিলেহ’ সবসময় নীতি-নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতেন।
এতোক্ষণ যে মহিয়সী নারী সম্পর্কে আলোচনা করছি তিনি
একজন প্রেসিডেন্টের স্ত্রী। সদ্য বিদায়ী ইরানের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট শহীদ ইব্রাহিম রায়িসির সহধর্মিনী। তাঁর নাম জামিলেহ আলামুল হুদা। ১৮ বছর বয়সে সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এরপর তিনি নিজেকে জাতির সামনে একজন স্ত্রী হিসেবে যেমনি আদর্শবান, ঠিক তেমনি প্রেরণাময়ী হিসাবে তুলে ধরতে পেরেছেন।
প্রেসিডেন্টের সহধর্মিণী হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র সফর করে ভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ও ফার্স্টলেডিদের সাথে তাঁর যে পরিচিতি গড়ে ওঠে সেটাকে তিনি নতুন মাত্রা দান করেছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে লাগানোর নয়া উদাহরণও সৃষ্টি করেছেন তিনি।

ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের হত্যা কাণ্ড বন্ধে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর স্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেলেন। চিঠিতে তিনি ফার্স্টলেডিকে অনুরোধ করেন ফিলিস্তিন ইস্যুতে ফ্রান্স যেন ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে না জড়ায়।
ঐতিহাসিক সেই চিঠিতে জামিলেহ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে লিখেন-
‘প্রিয় মিসেস ম্যাক্রোঁ, অনুগ্রহ করে একজন সদয় এবং আত্মত্যাগী নারী হিসেবে (যিনি ফ্রান্সের নারী, মা ও কন্যাদের প্রতিনিধিত্ব করেন) আপনার স্বামীকে বলুন যেন অসহায় ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের হত্যার সহযোগী না হন। আমি আপনার মানবিক প্রচেষ্টার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পুরস্কার প্রার্থনা করছি।’

ফরাসি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ব্রিজিথ তোনিয়ো ও রায়িসির স্ত্রী জামিলেহ

শুধু তাই নয় ২০২৩ সালে ভেনিজুয়েলা সফরে গিয়ে
জামিলেহ আলামুল হুদা সেখানকার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়ে বলেছিলেন পশ্চিমা নারী স্বাধীনতা যেখানে মেয়েদেরকে নিপীড়নের মুখে ঠেলে দেয়, তখন ইসলাম মেয়েদেরকে সঠিক মর্যাদা দেয়।
সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন- স্বাধীনতার নামে নারীরা কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’
এ সময় তিনি তথাকথিত নারী অধিকারকর্মীদের একপেশে কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলেন, ‘নারী অধিকার সংস্থাগুলো পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাগুলোর ওপর খুব বেশি আলোকপাত করে যেখানে পরিবারের বাইরে সংঘটিত সহিংসতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

আবার পশ্চিমা গণমাধ্যম এবিসিতে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক যখন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল- যেসব নারীরা হিজাব পরতে চান না তাদের ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন? জামিলাহ দ্বিধাহীন ভাবে জবাবে বলেছিলেন, ‘হিজাব না পরাটা নারীদের জন্য অসম্মানের।’
মেয়েদের হিজাব সম্পর্কে সেদিন তিনি বিশ্বকে স্পষ্টভাবে বলে দেন- ‘হিজাব আমাদের একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য আমাদের মাঝে ব্যাপকভাবে গৃহিত। জীবনের সর্বত্রই মেয়েদের পোশাক কোড রয়েছে।’

এবিসি নিউজে সাক্ষাৎকারে সেদিন ইরানের প্রেসিডেন্টের সহধর্মিনী হিসাবে জামিলেহ আলামুল হুদা খুব স্পষ্ট করে বলেছিলেন- আমরা নারীরা নারীই থাকব। কেন আমাদেরকে পুরুষের মতো হতে হবে? মূলত, এই কথার মাধ্যমে তিনি নারীকে পণ্য বানানোর যে পশ্চিমা রীতিনীতি তা থেকে মেয়েদেরকে মুক্ত করার স্পষ্ট বার্তা দেন।

এটাই জামিলেহ আলামুল হুদার বৈশিষ্ঠ্য। এভাবেই নিজের বক্তি স্বাতন্ত্র গড়ে তুলেছেন তিনি । মরহুম প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির স্ত্রী । আজ তিনি একজন সফল জায়া, জননী ও মুসলিম মেয়েদের জন্য এক আদর্শের নাম।

মেয়েরা যাতে ঘরে-বাইরে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে নিপীড়নের শিকার না হয় সেজন্য মুসলিম এই নারী সাহসিনীর বক্তব্য বিশ্বের প্রত্যেক মেয়ের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।

জামিলেহ’র জন্ম ইরানের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর মাশহাদে ১৯৬৫ সালে।

ঈষ্যত সম্পাদিত

সৌজন্য: পার্সটুডে ডট আইআর