ঢাকা, রূপশ্রী ডেস্ক: নতুন ইতিহাস গড়ে বৃটেনের মন্ত্রিপরিষদে প্রথমবার নিজদের জায়গা করে নিয়েছেন দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী। একজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। অন্যজন সিলেটের বিশ্বনাথের প্রথম ব্রিটেন জয়ী বাংলাদেশী কন্যা রুশনারা আলী।
টিউলিপ সিদ্দিককে ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের মন্ত্রিপরিষদে সিটি মিনিস্টার বা নগর মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে রুশনারা আলীকে দেয়া হয়েছে হাউজিং, কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মিনিস্টারের দায়িত্ব। তারা দু’জনেই লেবার দলের টিকিটে নির্বাচিত এমপি। নতুন এই দায়িত্ব পাওয়ার মাধ্যমে তারা বিশ্বে বাংলাদেশের নামকে নয়া মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ সরকারের এক বিবৃতিতে এই নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে।
ব্লুমবার্গ, বিবিসি, রয়টার্স অনলাইন থেকে জন যায়,
যুক্তরাজ্যের ‘সিটি মিনিস্টার’ মূলত ‘মিনিস্টার ফর ফাইন্যান্স সিটি’। এই পদে আসীন হওয়ায় টিউলিপ সিদ্দিক এখন থেকে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আর্থিক সেবা খাতের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবেন। যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবা খাতের নীতিনির্ধারণীতে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। অর্থনৈতিক খাতের প্রযুক্তি ও ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণের দায়িত্বও থাকবে তাঁর হাতে।
টিউলিপ সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার কন্যা। তার বয়স ৪১ বছর।
তিনি লেবার পার্টির মনোনয়নে টানা চতুর্থবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন সরকারে তাঁর দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টি মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে টিউলিপ সিদ্দিকের পরিচয় দেওয়া হয়েছে, পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি (ইকোনোমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার)। আগের কনজারভেটিভ দলের বিম আফোলামির স্থলাভিষিক্ত হবেন টিউলিপ সিদ্দিক।
গত মে মাসে তিনি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলে আর্থিক খাতে প্রতিযোগিতা ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস গত সোমবার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়া, আবাসন নির্মাণ বৃদ্ধি, অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাধা দূর করা এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যের নতুন একটি ‘জাতীয় মিশন’ চালু করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক আগে থেকেই ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির আর্থিক খাত ‘দ্য সিটি’র পলিসি নির্ধারণে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। দ্য সিটি অব লন্ডনের আর্থিক খাতকে এই নামে অভিহিত করা হয়।
টিউলিপের জন্ম ১৯৮২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর লন্ডনের সাটনে। তার পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিক। তিনি হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট থেকে এবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগে এই আসনটি পরিচিত ছিল হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নামে। এই আসনে ২০১৫ সাল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন টিউলিপ।
২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি রিজেন্ট পার্কের ক্যামডেন লন্ডন বরো কাউন্সিলর ছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিকের বড়ভাই রেদওয়ান ববি মুজিব এবং ছোটবোন আজমিনা সিদ্দিক।টিউলিপ ঢাকায় অবস্থিত স্কলাস্টিকা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।
রোশনারা আলী
অপরদিকে যুক্তরাজ্যের লেবার সরকারের মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ এমপি রুশনারা আলী।
তিনি পেয়েছেন গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী
হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রুশনারা আলী। লেবার সরকার গঠন করার পরপরই জল্পনাকল্পনা ছিল স্টারমারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন বৃটিশ বাংলাদেশি কেউ। কিন্তু প্রথম কেবিনেট মন্ত্রীদের তালিকায় কেউ স্থান পাননি। সর্বশেষ বৃটিশ মন্ত্রী পরিষদে ইতিহাসের প্রথম মন্ত্রী হলেন বৃটিশ বাংলাদেশি দুই এমপি। এর আগে টোরি সরকারের আমলে রুশনারা আলী যুক্তরাজ্যে ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ই মার্চ তার জন্ম। ২০১০ সাল থেকে তিনি বৃটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। এই পার্লামেন্টে প্রথম কোনো বাংলাদেশি বৃটিশ নাগরিক হিসেবে রুশনারা আলী নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তিনি বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে আসনটি বিলুপ্ত করা হয়। এ পর্যন্ত এ আসনের এমপি ছিলেন তিনি। এবার তিনি বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
রোশনারা আলীর জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ভুরকি গ্রামে। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইস্ট অ্যান্ড অব লন্ডনে অভিবাসী হন। সেখানে যোগ দেন মালবেরি স্কুল ফর গার্লস এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে। রুশনারা আলী বেড়ে ওঠেন টাওয়ার হ্যামলেটসে। সেখানে তার পিতা একজন শ্রমিকের কাজ করতেন। রুশনারা আলী সেইন্ট জনস কলেজ, অক্সফোর্ডে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন।