পুরান ঢাকায় ৩ কোটি টাকার নকল কসমেটিক্স জব্দ

1049

রূপশ্রী প্রতিবেদন

ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বরঃ

নকল কসমেটিক্স দিয়ে দেশের বাজার সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন অভিযানে বেড়িয়ে আসছে নকল কসমেটিক্স তৈরিকারী অসংখ্য কারখানা। ঠিক সেভাবেই গত মঙ্গলবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার এলাকায় তাজমহল টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাকওয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ ধরনের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার নকল বিদেশি কসমেটিক্স জব্দ করেছে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

চীন থেকে ৩২ ধরনের প্রসাধনী পণ্যের খালি বোতল আমদানি করে নকল প্রসাধনী তৈরি করে তাতে ভরে বিক্রি করত তাকওয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুদ্দিন চৌধুরী। একই কাজ করেন পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার তাজমহল টাওয়ারের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী।

অভিযানে র‌্যাব দেখতে পায় এসব দোকানে অবৈধভাবে আমদানি করা খালি বোতল নিজেদের অনুমোদনহীন কারখানায় নিয়ে রিফিল করে স্টিকার লাগিয়ে বাজারজাত করার চিত্র। যার মধ্যে শিশুদের জনসন বেবি লোশন, বেবি স্যাম্পু, জনসন পাউডার, ইউনিলিভারের পন্ডস, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীসহ ৩২ ধরনের পণ্যের নকল প্রসাধনী আসল বলে বাজারে বিক্রি করতেন সাইফুদ্দিন চৌধুরী।

অভিযানের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, তাজমহল টাওয়ারের তাকওয়া এন্টারপ্রাইজে অভিযান পরিচালনা করে ৩২ ধরনের বিদেশি বিভিন্ন ব্যান্ডের নকল প্রসাধনী পণ্য পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফুদ্দিন চৌধুরী নিজের অনুমোদনহীন কারখানায় এগুলো তৈরি করত। এজন্য সে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চায়না থেকে এসব প্রসাধনীর বোতল আমদানি করতেন। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে এসব পণ্য বাজারে ক্রেতাদের আসল বলে বিক্রি করতেন।

এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া তাকওয়া প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফুদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল আলিম নকির, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. আরমান, শেখ সাউদুল ইসলাম ও খায়ের হোসেন প্রত্যেককে ২ বছর করে কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা করে মোট ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

 

অভিযান শেষে বিএসটিআই ফিল্ড অফিসার মো. শরিফ হোসেন বলেন, তাকওয়া এন্টারপ্রাইজের একতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত মোট চারটি গোডাউন। তাকওয়া এন্টারপ্রাইজ ফর্সাকারী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু, সাবানসহ প্রায় ৫০ প্রকারের মতো প্রোডাক্ট তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল। যার সবগুলো নকল। এগুলোতে হাইড্রোক্লিন এবং মার্কারি নামক কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। ফলে তাতে মানবদেহে ক্ষতি হয় এবং ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

অপরদিকে, সোয়ারীঘাট এলাকার ৬/১০ চম্পাটুলি লেন এলাকায় নকল কারখানায় অভিযান চালিয়ে কারখানার মালিক মো. বাসারের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

তিনি বলেন, বিদেশি প্রসাধনী বিক্রির নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতারণা করে আসছে। এসব প্রসাধনীর মধ্যে শিশুদের ব্যবহার্য পণ্যই বেশি। এতে শিশুদের ত্বকে নানা রোগ দেখা দেয়। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

সকাল থেকে শুরু হওয়া র‌্যাবের এই অভিযান চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। অভিযানে সহযোগিতা করেছে র‌্যাব-১০ ও বিএসটিআইর সদস্যরা।

এর আগে গত ৯ মার্চ পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় প্রায় দুই কোটি টাকার নকল ও ভেজাল প্রসাধন সামগ্রী জব্দ করে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় জড়িত এক ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদন্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি নকল-ভেজাল প্রসাধনীর ১০টি গুদাম সিলগালা করে দেয় র‌্যাব।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজার এলাকায় নকল ও ভেজাল প্রসাধনীর গোডাউন ও দোকানে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-১০-এর সহায়তায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রায় ৫০ লাখ টাকার নকল প্রসাধনী জব্দসহ মালিক মনোয়ার হোসেন খোকন এবং ম্যানেজার মো. মিঠুকে দুই বছর কারাদ- ও পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপস্) মো. মনির হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে। খবর পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে শুধু পুলিশ এগিয়ে এলেই হবে না, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে যে পরিমাণ কসমেটিক্স অর্থাৎ স্নো, ক্রিম, শ্যাম্পু, সাবান, লোশন, আফটার-শেভ লোশন, পারফিউম এসব চাহিদা রয়েছে তার ১৫ শতাংশ পূরণ হচ্ছে দেশীয় কোম্পানির উৎপাদনে। আর ১৫ শতাংশ-আমদানি করা বিদেশি পণ্য। বাকি ৭০ শতাংশ কসমেটিক্স নকল ও ক্ষতিকারক উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে। পুরান ঢাকার চকবাজার, জিঞ্জিরা, ইসলামপুর এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরে এই ভেজাল কসমেটিক্স তৈরির কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে।

রূপশ্রী/এম এস