পাখির চোখে দেখা পাহাড় আর সাগরের অপূর্ব মিতালী

1379
সূর্যের সাথে মীম

মীম সাবিহা সাবরীনঃ

সব স্বপ্নই পূরণ সম্ভব শুধু চাই নিজেকে জয় করার ইচ্ছা। বত্রিশ’তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে নিজেকে উপহার দিলাম নিজের স্বাধীনতা, আকাশে উড়ার স্বাধীনতা, নিজেকে জয়ের স্বাধীনতা, ভয়কে জয় করার স্বাধীনতা।

৩২তম জন্মদিনে আমার এযাবতকালের সর্বোচ্চ ওজন, শ্বাসকষ্ট আর অন্যান্য অসুস্থতা নিয়েই আমি স্বপ্ন পূরণ করলাম। পাখির চোখে আকাশ দেখার স্বপ্ন। ছোট বেলায় পাইলট হবার স্বপ্ন ছিল, পাখির মত উড়তে মন চাইতো। পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পরে নিজেই গুটিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু আমার আমিকে কখনো গুটিয়ে ফেলিনি। এ যেন নিজেকে জয়ের আরেকটি ধাপ।

আকাশে উড়ে পাখির চোখে দেখলাম পাহাড় আর সাগরের অদ্ভুত মিতালী। গোধূলী বেলার মনোরম কিন্তু কী ভীষণ সুন্দর সুবিশাল সূর্য । আরেক পাশে সোনালী আলোয় সবুজে আচ্ছাদিত পাহাড়ের সারি আর মেরিন ড্রাইভের মনোরম দৃশ্য । প্যারাসুট থেকে বার বার ঘাড় ঘুড়িয়ে পাহাড় আর সূর্যের রূপ দেখছিলাম।

বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছি, নিচে দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে বিশাল সমুদ্র কুয়াশায় হারিয়ে গিয়েছে, কুয়াশা ভেদ করে দূরে একটি সাদা জাহাজ দেখা যাচ্ছে। চোখের সামনে সুবিশাল থালার মত সূর্য , সূর্যের আলো যে এতে স্নিগ্ধ লাগতে পারে জানা ছিলনা। ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখছিলাম কি সবুজ পাহাড়গুলো … এতো রোমান্টিক একটা দৃশ্য ! প্রিয় গান ‘তু মিলে দিল খিলে ..’ গেয়ে উঠতে মুখ খুললাম। কিন্তু মনে হলো এই ভীষন সুন্দর দুনিয়া যে বানিয়েছে এই পাখির উচিত আগে তার শুকরিয়া জানানো। মন ভরে জোরে জোরে পড়ে উঠলাম কালেমা শাহাদাত। শুকরিয়া জানালাম রাব্বুল আলামীনকে এতো সুন্দর করে দুনিয়া বানানোর জন্য , আমাকে দেখার সুযোগ দেয়ার জন্য।

প্রাণ ভরে মন খুলে হেসে উঠলাম জোরে জোরে।

এর মধ্যেই বাতাস অনেক বেড়ে যাওয়ায় উঠে গেলাম অনেক উচুতে , পাহাড়গুলোর মাথা পেড়িয়ে যাচ্ছি এমন। এবার চোখের সামনে ঝলক দিল কক্সবাজার শহরের সুউচ্চ হোটেলগুলির ছোট ছোট মাথা । পুরোটাই যেন স্বপ্ন .. উফফ কী ভীষণ সুন্দর … ।

প্যারাসেইলিং’এর আগে প্রস্তুত মীম
প্যারাসেইলিং’এর আগে ছেলের সাথে মীম

 

প্যারাসেইলিং’এর শুরু
সূর্যের কাছাকাছি মীম
প্যারাসেইলিং’এর শেষে নামছে মীম

 

 

 

 

 

 

 

স্বপ্নটা আরেকটু লম্বা হলে ভালো হতো। নিচে তাকিয়ে দেখি হাত দিয়ে ইশারা করছে কিন্তু আমি তো বাতাসের শো শো আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা! আরেকবার তাকালাম হ্যা হাত নাড়াচ্ছে… এবার নেমে পড়ার জন্য নির্ধারিত রশির লাল

জায়গা ঘরে টানতে থাকলাম। এটা ছিল প্রচন্ড বাতাসের বিপরীতে আমার সর্বশক্তিতে দড়ি টানার যুদ্ধ। এরপর বুঝতে না বুঝতেই কানে এলো “আপা দড়ি ছাড়েন”, ছাড়তেই নেমে পড়লাম টুপ করে। আমি নাকি খুব দ্রুত ল্যান্ড করেছি, লোকেরা আমার কাছে যাওয়ার আগেই। আগে বুঝলে আরো সময় নিয়ে আস্তে ধীরে ল্যান্ড করতাম। ব্যাপার না, নেক্সট টাইম আরেকটু সময় নিব তাহলে আরো একটু সময় পাখির চোখে আকাশ দেখার সময় পাবো ইনশাল্লাহ।

আকাশে উড়ে বেড়ানোর অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণ করলাম, আলহামদুলিল্লাহ।

বলছিলাম গত ১১ই ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে করে আসা প্যারাসেইলিং’এর কথা। যারাই কক্সবাজার যাবেন, চেষ্টা করবেন একবার হলেও প্যারাসেইলিং করে আসার। ইট’স আ মাস্ট ট্রাই । আর দেশের বাইরে তো করাই যায়, কিন্তু নিজের দেশ এতো সুন্দর, সেটা না দেখাও কিন্তু মিস।

আপনারা চাইলে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে প্যারাসেইলিং পয়েন্টে সহজেই প্যারাসেইলিং- এর শখ পূরণ করতে পারেন। জন প্রতি লাগবে মাত্র ২০০০ টাকা।

রুপশ্রী/ এম এস