আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা দিবস : জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে চার সহস্রাধিক নারী

278

সুরাইয়া তাসনিম

আজ ২৯ মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ৭৬তম বার্ষিকী। বিশ্বে প্রতি বছর এই দিনটি আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই দিনে বিশ্বের সংঘাত কবলিত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্লু হেলমেট পরিহিত জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বাহিনীর অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।
সবার জন্য আরও ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই বিশ্বের জন্য অগ্রগতি এবং সহযোগিতার অঙ্গীকার নিয়ে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন এ দিবসটি পালন করছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ফিট ফর দ্য ফিউচার, বিল্ডিং বেটার টুগেদার’ ।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন দায়িত্ব পালন শুরু করে। এরপর ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও এর সাথে যুক্ত হন। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যরাও জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন দায়িত্ব পালন শুরু করেন। সর্বশেষ ২০১০ সালে যুক্ত হন নারী সদস্যরা। সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী থেকে এ পর্যন্ত দুই সহস্রাধিক নারী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন দায়িত্ব পালন করে দেশে ফিরে এসেছেন। বর্তমানে ২ হাজার ৩০৩ জন নারী সদস্য জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী থেকে ৪৯৩ জন নারী শান্তিরক্ষী রয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যসহ মোট নারী শান্তি রক্ষী রয়েছেন ১ হাজার ৮১০ জন ।

বর্তমানে ১৩টি দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ও কার্যক্রমে ৬ হাজার ৯২ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন।প্রায় চার দশকে বিশ্বের শান্তিরক্ষার ইতিহাসে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে অবস্থান করছে। এরমধ্যে তারা সুনাম ও সাফল্যের সাথে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সম্পন্ন করেছে। এসময় তারা বিশ্বের ৪৩টি দেশে দায়িত্ব পালন করে সুখ্যাতির পাশাপাশি দুই হাজার কোটি টাকারও অধিক বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করেন।

“নারী শান্তিরক্ষীরা আপনার ধারণার চেয়ে শক্তিশালী”
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষী দিবস উপলক্ষে ইউএন ওমেন এশিয়া প্যাসিফিক জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল রুবানা নওশীন মিথিলার বক্তব্য ও ছবিসহ তাদের ভেরিফাইড সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) -এ”নারী শান্তিরক্ষীরা আপনার ধারণার চেয়ে শক্তিশালী” শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছে। ক্যাপশন করেছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রুবানা মিথিলার সাথে পরিচিত হোন। যিনি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য নারীদেরই মূল ভূমিকা নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
তারপর রুবানা মিথিলার ছবিসহ তার বক্তব্যের স্টিকারটি পোস্ট করা হয়।
“শান্তি সবার জন্য। প্রতেক্যের জন্য। যুদ্ধ ও সংঘাতহীন শান্তিময় বিশ্ব গড়ার জন্য নারী পুরুষ ভেদাবেদহীন ভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।”-লে. কর্নেল রুবানা নওশীন মিথিলা।

শান্তি রক্ষা দিবসের নানা কর্মসূচি
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসে নানা কর্মসূচী পালন করছে বাংলাদেশ। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এরআগে সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৪’ কর্মসূচী উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ।

এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সর্বমোট ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এ বছর ৩ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।